বেড়াতে যাওয়া ব্যাপারটার ওপর আমাদের, অর্থাৎ বাঙালীদের, একটা ঈশ্বরদত্ত অধিকার আছে। আর আছে সারা বিশ্ব ঘুরে এলেও বাঙালীর ‘দিপুদা’ (এখন এতে জুড়েছে মন্দারমনির ‘ম’)। এই অসহ্য গরমে ‘দিপু’ আর ‘ম’ ঘেমে নেয়ে নাজেহাল, তাই রইল পড়ে ‘দা’! দুবছর ধরে ঘরে আটকে থাকা মানুষের স্বস্তির নিশ্বাসে নাভীঃশ্বাস উঠে যাওয়া দার্জিলিং এর দোসর হয়ে উঠেছে কালিম্পং। হাতের কাছে এমন শৈলশহর (বহু যুগ পরে এবার বরফ পড়ে অনেকটা পুরোনো স্ট্যাটাস ফিরে পাওয়া) থাকতে আর কেই বা বেশী চায়? তাই বাঙালীর ছাই ফেলতে ভাঙা কুলোর মত দু-দিন ফাঁকা পেলেই ওই দিকে দৌড়োনোর প্রবনতার ফলে দার্জিলিং-কালিম্পং শুনলে আজকাল কেমন হাফ ধরে, ভীড়টার কথা ভাবলে। কিন্তু পাহাড়ের ডাক তো অগ্রাহ্য করা যায় না। তাই তো শিলিগুড়ি ছাড়িয়ে রেল ব্রীজের পাশে সমতলে এসে প্রায় শুকনো হয়ে যাওয়া তিস্তার নদীগর্ভে ছড়ানো পাথরের আস্তরণ দেখলেও মনে কেমন পাহাড়ের স্বাদ পায়।
তবে একা বেড়ানো ব্যপারটা কেমন যেন ঠিক জমে না। সঙ্গী আবার তেমন মনমত না হলে গন্ডগোল বাঁধে। তাই সেই সঙ্গী “বন্ধু” হলে আর সেটি একবচন না হয়ে বহুবচন হলে ষোল কলা পূর্ণ হয়। কথায় বলে “ছোটবেলার বন্ধু”… আমার মতে বন্ধু কোন বেলার হয় না। পরিচিতির বেলা থাকে… বেলাও নয়, মাহেন্দ্রক্ষণ। সেই মুহুর্তটাই নির্দিষ্ট করে দেয় কোন বন্ধু কোন বেলা অবধি সঙ্গ দেবে। আমার জীবনে এমন মুহুর্তের রমরমা। তাই আমার বন্ধু সংখ্যাও ইর্ষনীয়। আর ভাগ্যক্রমে তাদের অধিকাংশই ভ্রমনবিলাসী।
কোভিড পরবর্তি জীবনে, বহু অপেক্ষার পর তাই আমাদের ৭ পরিবার বন্ধুরা জানুয়ারি মাসে ব্যবস্হা করেছিলাম দুটো দিন পাহাড়ে কাটাবো। প্রতি বছর ই আমরা একসাথে একটা tour করি। যেহেতু আমাদের দলে ছোট-বড় মিলিয়ে ২১ জন তাই কোন হোম-স্টে যেখানে ৬-৭টা ঘর থাকে, সাধারনত আমরা তেমনই খোঁজার চেষ্টা করি। নাহলে আমাদের উচ্ছাসে অন্যের ব্যাঘাত ঘটতে পারে আর সেটা আমাদের কাম্য নয়। ট্রেনের দুদিকের টিকিট, থাকার বুকিং করার পর আবার হানা দিল কোভিড। অগত্যা, বুকে পাথর রেখে বাতিল করার আগে একবার চেষ্টা করে দেখা গেল, বুকিংটা ওপেন রাখার ব্যবস্হা আছে – যদি আমরা পরে যেতে চাই।
এবার সমস্যা হল ৭টি পরিবারের বিভীন্ন কাজ-কারবার-স্কুল-পরিবার ইত্যাদি গুছিয়ে আবার দিন ঠিক করা। এবার দাবি উঠলো পিছিয়েই যখন যাচ্ছে, আর এদ্দুর যখন যাচ্ছি, আর দুটো দিন বাড়ানো যায় না? তবে একই যায়গায় নয়, কাছাকাছি আর একটা কোথাও। আবার গবেষনা… অবশেষে পাওয়া গেল এবং সব বুকিং এবং টিকিট হয়ে গেল ফেব্রুয়ারির শুরুতে। তারপর… অপেক্ষার ৩টি দুঃসহ মাস। দেখতে তাও কেটে গেল। পরিস্হিতি যদি মানুষের আয়ত্তে হত, কতই না ভালো হত। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশতঃ জীবন নিজের ধারায় চলে আর যাওয়ার সপ্তাহ খানেক আগে একটি পরিবারে অনিবার্য কারনে যাওয়া বাতিল হল। আর এক জোড়া বন্ধু-বন্ধুনী কটা দিন আগে গেল “WEEEEEE time”এর আগে নিভৃতে একটু “WE” time কাটাতে। কথা হল তারা পৌঁছে যাবে জায়গামত।



বহু মাসের অপেক্ষার শেষে, বহু আলোচনার শেষে (ঠিক কতটা গরম কাপড় নেওয়া উচিত, ছাতা বা রেনকোট নেওয়ার দরকার আছে কিনা, রাতের খাবার কি নেওয়া হবে, কতটা রসসামগ্রী যাবে ইত্যাদি) ৩রা মে রাতে, শিয়ালদা থেকে চড়লাম দার্জিলিং মেল এ…গন্তব্য চারখোল-তন্দ্রাবং। এই লিংক এ দেখতে পাবেন ট্রেনের একটি ছোট্ট ভিডিও।